বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থা

26

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থা কয়েকদফা বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে বন্যার কারণে ৩ দফা বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্থগিত হয়েছে পরীক্ষাও। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ৩ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কয়েক শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। এসময় পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ সিলেটের উপ পরিচালক জাহাঙ্গির কবির আহমদ বলেন, এবছর তিন দফা বন্যার কারণে তিনবার বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়েছে। ফলে শিক্ষাকার্যক্রম কিছুটা ক্ষতিগ্রসস্ত হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর তো আমাদের কিছু করার নেই। আগামীতে বন্ধ ও ছুটির সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।
গত মার্চের মাসে শেষ সময়ে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেট বিভাগের হাওরাঞ্চলে অকাল বন্যা দেখা দেয়। এপ্রিলের পর্যন্ত অব্যাহত এই বন্যায় বোরো ধানের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওরাঞ্চলের শিক্ষা কার্যক্রমও। বন্ধ হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওর এলাকার তিন শতাধিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সে সময় অঞ্চলভেদে গড়ে পনের দিন বন্ধ ছিলো এসব এলাকার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম।
অকাল বন্যার রেশ না কাটতেই গত জুলাইয়ের প্রথমদিন থেকে ফের বন্যা দেখা দেয় সিলেট বিভাগে। ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর সেসময় সারাদেশের সবগুলো বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলেও সিলেট ও মৌলভীবাজারের বেশিরভাগ বিদ্যালয় তখন বন্ধ ঘোষণা করা হয় বন্যার কারণে। দুই জেলার প্রায় ৪শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেসময় আরও ১৫ দিন পাঠদান বন্ধ থাকে। দীর্ঘসময় বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় বড়লেখা, ফেঞ্চুগঞ্জের কোনও এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক মাসও বন্ধ ছিলো।
জুলাইয়ের বন্যার পানি এখনো পুরোটা নামেনি। এরমধ্যে গত ১০ আগস্ট থেকে ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের অনেকস্থানে দেখা দেয় বন্যা। এ বন্যায়ও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। এতে প্লাবিত হয়ে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা , দিরাই , দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
এতে স্কুল ভবনে পানি ঢুকে পড়া ও সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলার ৮৯০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান ষাণ্মাসিক পরীক্ষা স্থগিত থাকে তিন দিন। গড়ে তিন দিন বন্ধ ছিলো জেলার ২৮৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সুনামগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়োজীদ খান বলেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুল ও স্কুল সংলগ্ন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। এখন আবার সবগুলো স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, বন্যার কারণে কয়েকদিন কিছু বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
চলতি মাসের বন্যায় মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার ৪৬ টি, কুলাউড়া উপজেলার ৪০টি, জুড়ি উপজেলার ১৫টি, রাজনগর উপজেলার ১৪টি ও মৌলভীবাজার সদরের ৪টি বিদ্যালয় গড়ে দুইদিন করে বন্ধ ছিলো বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ সময় পানি ঢুকে পড়ায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে তিনের মধ্যেই সব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হয় বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাটের সহকারী শিক্ষা অফিসার রেজাউল ইসলাম।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক তাহমিনা খানম বলেন, বন্যার কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। বিদ্যালয়ে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকস্থানে এখন আশপাশের বাড়িতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বাড়তি সময় ক্লাস নিয়েও যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।