ছাত্র-জনতার মানববন্ধন ॥ বাহুবলে স্কুলছাত্রী হত্যার ১০ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

37

হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
বাহুবলে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নাঈমা হত্যাকান্ডের ১০দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। মামলা নিতে বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে গতকাল শনিবার ছাত্র-জনতা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা যায়, গত ৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় পুলিশ ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে। নাঈমা উপজেলার সোয়াইয়া গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়ার কন্যা। নিহত নাঈমার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ মর্গে প্রেরণ করলে সুরতহাল প্রতিবেদনে লাশের শরীরে থাকা আঘাতের চিহ্ন উল্লেখ না থাকায় ডাক্তাররা ময়না তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে ডাক্তার ও পুলিশের রশি টানাটানিতে লাশ ৩ দিন মর্গে পড়ে থাকে। পরে ১২ আগস্ট হবিগঞ্জের সিভিল সার্জনের হস্তক্ষেপে ৫ ডাক্তারের বোর্ড শিশু নাঈমার মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে।
উল্লেখ্য, উপজেলার সোয়াইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্রী নাঈমা আক্তার শামীমা গত ৯ আগস্ট বিকেল ৩টায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। সন্ধ্যার দিকে বাড়ির পাশে খালের কাছে কচুরিপানায় ঢাকা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা। খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন ১০ আগষ্ট পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য লাশ হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করেন। পুলিশ সুরতহালে লাশের গায়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে উল্লেখ করে। কিন্তু মর্গে ময়না তদন্ত করতে গিয়ে লাশের গলা ও পেটে আঘাতের চিহ্ন দেখে থমকে দাঁড়ান হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ বজলুর রহমান ও ডাঃ দেবাশীষ দাস। আটকে যায় ময়না তদন্ত প্রক্রিয়া। পরে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ সুচিন্ত চৌধুরীর হস্তক্ষেপে ১২ আগষ্ট ৫ ডাক্তারের বোর্ড শিশু নাঈমার ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে।
এদিকে, পুলিশ শিশু নাঈমা হত্যা মামলা নিতে টালবাহানা করার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে স্থানীয় সোয়াইয়া বাজারে সোয়াইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক এবং অপরাহ্নে বাহুবল উপজেলা সদরে সচেতন ছাত্র সমাজের ব্যানারে পৃথক দু’টি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধন কর্মসূচিগুলোতে বক্তারা, মামলা গ্রহণ না করায় পুলিশি ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। অবিলম্বে নিষ্পাপ শিশু নাঈমা হত্যা মামলা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বক্তরা বলেন, অন্যথায় উপজেলার সকাল ছাত্র-জনতা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
এদিকে, নিহত নাঈমার পিতা ফরিদ মিয়া গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদককে জানান, আমার মেয়ের লাশের ময়না তদন্ত নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে পচা গলা লাশ আমার হাতে তুলে দেয়া হয়। দাফন শেষে ১৪ আগষ্ট আমি আমার স্বজনদের নিয়ে বাহুবল থানায় এজাহার নিয়ে হাজির হই। এ সময় পুলিশ এজাহার পরিবর্তনের কথা বলে ফিরিয়ে দেয়। এরপর বার বার এজাহার পরিবর্তন করে দেয়ার পরও তারা মামলা নেয়নি। পুলিশের টালবাহানার কারণে ১০ দিনেও আমার শিশু কন্যা হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল হক জানান, মামলা না নেয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। নিহতের পিতাসহ স্বজনদের বলেছি সুরতহাল রিপোর্টের সাথে সংঘতি রেখে এজাহার দেয়ার জন্য। সে ভাবে এজাহার নিয়ে আসলে অবশ্যই মামলা নেয়া হবে।